শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৪ অপরাহ্ন

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল: গাফিলতি না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল: গাফিলতি না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

সম্প্রতি দেশের ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থার বিরুদ্ধে বেশি বিল দেয়ার অভিযোগ ওঠে দেশজুড়ে। শুধু ভৌতিক বিল করেই ক্ষান্ত হয়নি বিদ্যুৎ বিতরণকারী কর্তৃপক্ষ, তা সংশোধন না করে আদায়ের জন্য চাপও দেয়া হয়েছিল। বিল পরিশোধ না করলে ৩০ জুনের পর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করারও ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। সরকার অবশ্য এই তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল ঠিক সময়ে পরিশোধ না করার জরিমানা মওকুফ করেছে।
সবচেয়ে বেশি অতিরিক্ত বিল হাতে পেয়েছে গ্রামীণ এলাকার জনগণ; যারা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহক। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ বিভাগ একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। বিতরণকারী সংস্থাগুলো অতিরিক্ত বিল তৈরির সংখ্যা ও কারণ ব্যাখ্যা করে টাস্কফোর্সকে জানায়। টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন মতে, সব মিলিয়ে ৬২ হাজার ৯৬ গ্রাহকের বিলে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আরইবির দুই কোটি ৯০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১১ জনের অতিরিক্ত বিল করা হয়েছে। ডিপিডিসির ৯ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৯ গ্রাহকের মধ্যে ১৫ হাজার ২৬৬ জন, ডেসকোর ১০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে পাঁচ হাজার ৬৫৭ জন, নেসকোর ১৫ লাখ ৪৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে দুই হাজার ৫২৪ জন, ওজোপাডিকোর ১২ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৫৫৬ জন, পিডিবির ৩২ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জনের মধ্যে দুই হাজার ৫৮২ জন অতিরিক্ত বিলের শিকার হয়েছেন। তবে ভুল বিদ্যুৎ বিলের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি বলে মনে করছে ভোক্তা অধিকার আন্দোলনে জড়িত বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিরা।
ভুতুড়ে বিলের পেছনে ২৯০ জনকে চিহ্নিত করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত টাস্কফোর্স। এ সম্পর্কে গত রোববার সরকারের অবস্থান এবং কাজ সম্পর্কে বক্তব্য তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব। সচিব জানিয়েছেন, জুনের মধ্যে বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে জরিমানা বা বিলম্ব ফি ছাড়া বিল দেয়ার বিষয়ে গ্রাহকদের ছাড় দেয়া হয়েছিল। আবাসিক খাতে এটি বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। ভুতুড়ে বিলের জন্য গ্রাহকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সচিব বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের কারণে অনেক মিটার রিডার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার রিডিং করতে পারেননি। এ জন্য এ সমস্যা হয়েছে।’
বিদ্যুৎ বিলের এই ভেলকিবাজির তিনটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। কারণগুলো হলোÑ মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো। বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের হিসাব মেলাতে বিল বেশি দেখানো এবং বিদ্যুৎ বিলের ধাপ (শ্লট) ভিত্তিক হিসাব। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিলের সর্বনিম্ন স্তরের নাম লাইফ লাইন। প্রতি ইউনিটের দাম এখন ৩.৭৫ টাকা। মার্চ থেকে বিদ্যুতের দাম ৫ থেকে ১০ ভাগ বেড়েছে। আগে লাইফ লাইনের প্রতি ইউনিটের দাম ছিল ৩.৫০ টাকা। বিদ্যুতের লাইফ লাইন সুবিধা পেতে নির্ধারিত ৫০ ইউনিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। এর বেশি ব্যবহার করলে দাম প্রথম ধাপ ৪.১৯ টাকা হিসাবেই পরিশোধ করতে হয়। কত ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হলো সেভাবে ধাপগুলো নির্ধারণ করে বিদ্যুতের বিল হিসাব করা হয়। এর সাথে আরো কিছু চার্জ যুক্ত হয়। এবার মার্চ, এপ্রিল এবং মে এই তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল একসাথে দেয়া হয়েছে। তাও দেয়া হয়েছে অনুমান করে। একজন গ্রাহক মাসে ৭৫ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে মাসে মাসে বিল পেলে তার বিল হতো প্রতি ইউনিট ৪.১৯ টাকা হিসাবে; কিন্তু এবার তিন মাসে তাকে একসাথে বিল দেয়া হয়েছে ২২৫ ইউনিটের। তাহলে তার প্রথম ধাপ ৭৫ ইউনিটের বিল হয়েছে ৪.১৯ টাকা হিসাবে। দ্বিতীয় ধাপ ৭৬-২০০ ইউনিটের বিল হয়েছে ৫.৭২ টাকা হিসাবে, আর ওই গ্রাহকের তৃতীয় ধাপ ২০০-৩০০ ইউনিট-এ ২৫ ইউনিটের বিল হয়েছে ৬.০০ টাকা হিসাবে। এর সাথে বছর শেষে রাজস্বের হিসাব মেলানোর জন্য অতিরিক্ত আরো ১০-১৫ ভাগ বাড়তি বিল করা হয়েছে ।
বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ বিলের ত্রুটির কথা স্বীকার করেছে। প্রশ্ন হলো, এই ভুল কি শুধুই গাফিলতি, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তা খতিয়ে দেখা দরকার। সবার মনে রাখা উচিত, ত্রুটি স্বীকার করলেই সব দায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। এমন দায়িত্বহীন কাণ্ড যারা ঘটিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন রয়েছে সবার স্বার্থে। তা না হলে এমন ভুলের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877